নন্দকুঁজা নামের একটা নদী ছিল

নন্দকুঁজা নামের একটা নদী ছিল,নন্দকুঁজা প্রমত্ত নদী না হলেও এর গতিপথ স্বাভাবিক ছিল। নন্দকুঁজাকে ঘিরেই একসময় গড়ে উঠেছিল আহমেদপুর, হালসা, হোলাইগারি, নাজিরপুর, গুরুদাসপুর, চাঁচকৈড়ের মতো বড় বড় হাটবাজার। বাজারগুলোয় ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভালোই চলত। সে সময় নন্দকুঁজা নদীতে বছরজুড়েই পানি থাকত। বছরের পর বছর পলি পড়ে আর ড্রেজিং না করায় নদী এখন খালে পরিণত হওয়ার পথে।

 

নন্দকুঁজা নামের একটা নদী ছিল

 

 

নন্দকুঁজা নামের একটা নদী ছিল

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদী হারিয়েছে তার সৌন্দর্য আর জৌলুশ। বর্ষাকালে নদী পানিতে ভরে থাকলেও বর্ষা শেষ হলে পানির দেখা মেলে না। নদীতে অনেক আগেই নৌ চলাচল বন্ধ হয়েছে। নদী দখল আর বর্জ্য ফেলে ভরাট করার কারণে নদী সংকুচিত হয়েছে। নদীকেন্দ্রিক কর্মজীবী মানুষ হয়েছে বেকার, তারা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। প্রভাবিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিজমিতে সেচকাজ ব্যাহত হয়েছে। প্রতিবেশব্যবস্থা, জলজ প্রাণী আর

মৎস্যসম্পদ পড়েছে হুমকির মুখে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানি দিনের পর দিন নিম্নগামী হচ্ছে। গভীর নলকূপের উত্তোলিত পানি এখন এই অঞ্চলের কৃষকের চাষবাসের ভরসা।নন্দকুঁজা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা সদর ঘেঁষে এবং বড়াইগ্রাম, সিংড়া ও নাটোর সদর উপজেলার বেশ কিছু অংশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কীর্তিনাশা-পদ্মা থেকেই যার উদ্ভব; কিয়দংশ বড়াল নামেও প্রবাহিত হয়েছে। নারদ নদ নন্দকুঁজায় গিয়ে

মিশেছে। নন্দকুঁজা আবার মিশেছে গুমানী নদীতে আর গুমানী পড়েছে বড়ালে, বড়ালের যাত্রার সমাপ্তি ঘটেছে হুরাসাগর নদে। যমুনায় পতিত হয়ে হুরাসাগরের আত্মতৃপ্তি ঘটেছে। মাঝে আত্রাই আর নন্দকুঁজা মিলে পরিণত হয় গুমানী নদীতে। ভাবা যায়, একসময় নন্দকুঁজা নদীতে লঞ্চ চলত! নিয়মিত চলত গহনার নৌকাও। বহুকালের সাক্ষী নন্দকুঁজা আজ প্রৌঢ়।নাটোর চিনিকলের বর্জ্যে নন্দকুঁজা দূষিত হয়। বর্জ্যের প্রভাবে নদীর পানি বিষিয়ে ওঠে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পরিবেশ ও প্রতিবেশব্যবস্থা প্রভাবিত হওয়ার পাশাপাশি পচা পানিতে শুধু মাছই নয়, মারা যাচ্ছে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। নদীতীরবর্তী জনপদের মানুষ সেচ, গোসলসহ ঘরবাড়ির কাজে এখন নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছে না। দূষিত পানি ভুল করে কেউ ব্যবহার করলে আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। অবহেলিত নদীটি আজ মৃতপ্রায়। প্রকাশ্যেই তিলে তিলে নন্দকুঁজা নদীর মৃত্যু ঘটছে। দুই বছর আগে নন্দকুঁজার খননকাজ শুরু

হলেও অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। নদী আমাদের সভ্যতার বিকাশে অনেক অবদান রেখেছে। নদীকে নদীর মতো বাঁচতে দেওয়া উচিত।বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের ২০১৯ সালের একটি রায়ে দেশের নদীগুলোকে জুরিসটিক পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামের সংগঠনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তুরাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হলেও পরে দেশের সব নদীর ক্ষেত্রে

এই রায় বহাল রাখা হয়।নন্দকুঁজা নদী ড্রেজিং করার দাবি রাখে। এ নদীকে রক্ষার জন্য সুশীল সমাজসহ স্থানীয় পৌরসভা, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, নদী রক্ষা কমিশন একক এবং যৌথ ভূমিকা রাখলে নন্দকুঁজা ফিরে পেতে পারে তার হারানো রূপ। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় রক্ষার অভিভাবক। নদীগুলোকে জুরিসটিক পারসন হিসেবে ঘোষণা করার পর নদ-নদী রক্ষায় আদালতেরও

 

 

নন্দকুঁজা নামের একটা নদী ছিল

 

ভূমিকা বেড়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় ঘোষণার বিষয়টি নন্দকুঁজাপাড়ের সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে এবং সচেতন করতে হবে। এখন নদী রক্ষায় আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। নন্দকুঁজা নদীর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দূষণ-দখল প্রতিরোধ করাসহ চিনিকলের বর্জ্য যেন নদীর পানিতে না মিশতে পারে, এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই নন্দকুঁজাপাড়ের মানুষের জীবন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং নন্দকুঁজা নদী ফিরে পাবে প্রাণশক্তি।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment